এটি একটি ইসলামিক বাংলা অ্যাপস্ । সিজদার গুরুত্ব ও তাৎপর্য ।
‘সিজদা’ এক অনন্য বা অদ্বিতীয় সম্মাননা, যা শুধু আল্লাহরই প্রাপ্য। মহান আল্লাহ বলেন, وَاسْجُدُوا لِلَّهِ ‘তোমরা আল্লাহকে সিজদা কর’ (ফুছছিলাত ৪১/৩৭)। সিজদা দ্বারা মানব জাতির পিতা আদম (আঃ)-কে প্রথম অভ্যর্থনা জানান হয়। এর দ্বারা মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দানের বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। আলোচ্য নিবন্ধে সিজদার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা করা হ’ল।
আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করে ফেরেশতাদের প্রতি আদম (আঃ)-কে সিজদা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন’ (হা-মীম-সিজদাহ ৪১/১১)। ইবলীস ব্যতীত ফেরেশতারা সকলে তাঁকে সিজদা করল। অহংকারবশত সে ভুল করল এবং পথভ্রষ্ট হ’ল। আল্লাহ ইবলীসকে জিজ্ঞেস করলেন, আদমকে সিজদা না করার কারণ কি? ইবলীস বলল, আদম মাটির তৈরী আর আমি আগুনের তৈরী, কাজেই মাটির তৈরী মানুষকে আগুনের তৈরী জিন সিজদা করতে পারে না’ (অর্থাৎ সে অহংকার করল)। আল্লাহ তার প্রতি চরম অসন্তুষ্ট হ’লেন এবং তার প্রতি চিরতরে অভিশম্পাত করলেন।
মূলতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ইবাদত করার জন্যই মানব জাতিকে সৃষ্টি করেন। অতঃপর মানব জাতির প্রতি অসামান্য ভালোবাসার প্রতীক হিসাবে সিজদার মত গুরুত্বপূর্ণ সম্মান দ্বারা আদম (আঃ)-কে বন্ধুরূপে বরণ করে নেন। অতঃপর ইবলীসের শয়তানী চিন্তা-চেতনা ও সীমালংঘনের বিষয় আদম (আঃ)-কে অবহিত করে তার নিকট থেকে অনেক দূরে ও সাবধানে থাকতে বলেন। আর জান্নাতে একটি বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেন। কিন্তু শয়তান ইবলীস তার মিথ্যা ও লোভনীয় কথা দ্বারা আদম ও হাওয়া (আঃ)-কে আল্লাহর আদেশ লংঘনে উদ্বুদ্ধ করল। আদম ও হাওয়া (রাঃ) শয়তানের ধোঁকা ও প্রতারণা বুঝতে পারেননি, ইবলীসের মিথ্যা কসম ও কথায় বিশ্বাস করে এক পর্যায়ে তারা নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ফেললেন। এজন্য আল্লাহ আদম (আঃ)-এর প্রতি অসন্তুষ্ট হন এবং কিছু কালের জন্য তাঁদের পৃথিবীতে নির্বাসন দেন। আল্লাহ শয়তানকেও অভিশপ্তরূপে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন।
মূলতঃ সিজদা কখনোই আদম (আঃ)-এর জন্য ইবাদত ছিল না। বরং তা ছিল মানব জাতির প্রতি অন্যদের সম্মান প্রদর্শন। আসলে সিজদা হ’ল আল্লাহর প্রাপ্য এবং আল্লাহর প্রতি যাবতীয় ইবাদতের শ্রেষ্ঠাংশ। আল্লাহ মানব জাতির জন্য ছালাতের মত একটি ইবাদতের বিধান দান করেছেন। অতঃপর সারা বিশ্বের মানুষের সিজদার দিক নির্দেশনা বা প্রতীক হিসাবে বায়তুল্লাহ বা কা‘বা শরীফ নির্ধারণ করেছেন। ফলে সমগ্র জগতের মানুষ আল্লাহর আদেশে বায়তুল্লাহকে কিবলা হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। উল্লেখ্য, ইবলীস জান্নাত থেকে বহিষ্কৃত হ’লেও মানুষের রগ-রেশায় ঢুকে ধোঁকা দেওয়ার ও বিভ্রান্ত করার ক্ষমতা আল্লাহ তাকে দিয়েছিলেন। আর এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। শয়তানের ধোঁকা বা প্রবঞ্জনাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে পারলেই মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্ব বহাল রাখতে পারবে এবং আল্লাহর প্রিয় পাত্র হয়ে পরকালে জান্নাত লাভ করবে। পক্ষান্তরে শয়তানের ধোঁকায় আল্লাহর পথ ছেড়ে দিয়ে শয়তানের পথ ধরলে পরকালে জাহান্নামে থাকতে হবে। সুতরাং শয়তানের সিজদা না করার বিষয়টি মানুষকে বার বার স্মরণ করে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।
পৃথিবী হ’ল মানুষের জন্য সাময়িক পরীক্ষাকেন্দ্র মাত্র। জান্নাত থেকে নেমে আসা মানুষ পৃথিবীর পরীক্ষাস্থলে সুন্দর কাজের মাধ্যমে পুনরায় জান্নাতে ফিরে যেতে পারবে, অন্যথা ব্যর্থ হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। এ বিষয়ে উপযুক্ত শিক্ষা দানের জন্য আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির কল্যাণে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ করেছেন এবং সিজদার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বর্ণনা করেছেন।
আশা করি বন্ধুরা নিজেরা ও আমল করবেন এবং শেয়ার করবেন যাতে অন্য বন্ধুরা ও পড়ে আমল করতে পারে ।